একটা ভূতের গল্প
১ রাত দুইটা বাজে। এবার উঠতে
হবে। টাইড খেলা অনেক হয়েছে। আর ভাল লাগছে না। যদিও তাসের এই পর্ব সারারাতই চলবে।
মামুন বিদায় নিল। বন্ধুরা নাছড় বান্দা। কেউ ছাড়তে চাই না। চাদঁ রাত বলে কথা।
সারারাত ক্লাবে হই হুল্লর। আজ আবার একটা ছ...াগল চুরি করা হয়ে
ছে। রান্না ভাল হয়নি। কেমন একটা বমি বমি
লাগছে। মামুন ঢাকায় থাকে। ঈদের সময় শুধু বাড়ি আসা। চাদঁ রাতে পাড়ার এই ক্লাবটির
চেহেরায় বদলে যায়। প্রায় সব বন্ধু ই জড়ো হয়। এবার শুধু নয়ন নেই। ডিভি পেয়ে
আমেরিকা চলে গেছে। নয়নের উদ্দেশ্যে শোকগাথাঁ লেখা হয়েছে। কাশেম লিখেছে। কবি
হিসাবে এই মফস্সল শহরে তার আবার খানিক নাম ডাক আছে। ভোর চারটায় আরেকবার গলা
ভেজানোর ব্যবস্থা আছে। মামুনের মন ক’দিন ধরে
এমনিতেই খারাপ। বিয়ের পর রুমা’কে ছাড়া প্রথম ঈদ করছে। মামুন শত প্রলোভন
উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পড়ল। শরিরটা আসলেই খারাপ করেছে। মাথার ভিতর একটা ভোতাঁ
যন্ত্রনা। ক্লাব থেকে বেরিয়ে বাড়ির সর্টকার্ট পথ ধরল। ধানক্ষেতের আল দিয়ে। রাত
ভালই হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোবাইলে চার্জ নেই। অনভস্ত্যতায় পথ চলতে একটু কষ্টই
হচ্ছে। হঠ্যাৎ
করে বমি চলে এসেছে। আর আটকাতে পারল না। ধান ক্ষেতের পাশেই বসে পড়ল। মনে হচ্ছে আর দাড়াতে পারবে না। আশেপাশে কাউকে খোজাঁর
চেষ্টা করল। কেউ কি আছে। অন্ধকারে ভাল করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এখনো অনেক পথ।
একটু পানি পেলে ভাল লাগত। কুলি করা দরকার। ঠিক এসময় নিমাই দা এসে উপস্থিত
: কিরে, মামুন না। কি হয়েছে তোর।
: নিমাই দা। খুব খারাপ লাগছে
: দাড়া। আমাকে ধরে দাড়া।
: মনে হয় পারব না। একটু পানি খাওয়াতে পারবে।
: পানি নেই। ধর স্প্রাইট খা।
: দেও।
মামুন স্প্রাইট দিয়েই কুলকুচি করল। আরেকবার বমি হয়ে গেল।
: নিমাই দা, আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবা।
: শোন আমার বাসাতো কাছেই। তুই চল। আগে কিছুক্ষন রেস্ট নিবি।
২
মামুন বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিল। নিমাই দা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের অংকের মাষ্টার। মামুনদের দু-ব্যাচ সিনিয়ার। অসম্ভব ভাল। কিছু মানুষ থাকে উপকার করার জন্য জন্মায় সেই টাইপের। মামুন নিমাই এর হাত ধরে উঠে দাড়াল। দু-জনেই নিরবে এগিয়ে চলছে। গুনগুন করে নিমাই দা কি যেন একটা গাইছে। মামুনের তখন শোনার মত অবস্থা নেই। হঠ্যাৎ নিমাই দা মামুনের হাত শক্ত করে ধরল।
: কি হয়েছে?
: সামনে দেখ।
সামনে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাফনের কাপড় পড়ে পাচঁটা লাশ পড়ে আছে ধান ক্ষেতের উপর। হালকা নড়ছেও। ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল কেন জানি।
: চল
: কি ওগুলো
: চল না। যেয়ে দেখি।
: যাবা
: দুর গাধা। তুইতো ভয়েই আধমরা হয়ে গেলি।
: আমিতো এমনিতেই আধঁমরা। কিছু দেখলে কিন্তু ফুল মরা হয়ে যাব।
: বকবক করিস না। চল
কিছু দুর যেয়েই ঘটনা পরিস্কার হল। ধান ক্ষেতের উপর কে যেন কাপড় শোকাতে দিয়েছে। সাদা কাপড়। সেগুলোই দূর থেকে লাশের মত লাগছে। দু-দজনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। নিমাই দা’র গানটা এবার বোঝা যাচ্ছে। নজরুল সংগীত।
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….
ভুলিও স্মৃতি মম নিশীথ স্বপন সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ পরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….
৩
মামুন শুয়ে আছে নিমাই দা’র বাড়িতে। বাসা পর্যন্ত যেতে পারে নি। নিমাই দা’র বাড়ির সামনে আরেকবার বমি। কিছুতেই নিমাই দা ছাড়ল না। একটা এভোমিন পাওয়া গেছে। বৌদিও খুব ভাল। সাক্ষাত প্রতিমা’র মত চেহারা। মামুনের বিছানা গুছিয়ে দিল। বেশি কথা না বাড়িয়ে মামুন চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ছোট্ট একটা বাড়ী নিমাই দা দের। তিন রুমের। উপরে টিন। নিমাই দা বৌদি’ পাশের রুমে। বাসায় বোধহয় আর কেউ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিমাই দা’র একটা ছোট বোন ছিল। রাজশ্রী। মামুনের সাথে একটা অনৈতিক সম্পর্কও কিভাবে যেন গড়ে উঠেছিল যৌবনের প্রথম বছরে। বেশি দূর আর এগোয়নি। মামুন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে চলে এল। পরের বার গিয়ে শোনে বিয়ে হয়ে গেছে। সে অনেক দিন হল। শুনেছি এখন তিন ছেলে মেয়ের মা।মামুন রাজশ্রীর চেহারাটা মনে করা চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না। আর দু-চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই। হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। অদ্ভুত একটা শব্দে। মনে হচ্ছে এ ঘরে কোন মহিলা নামাজ পড়ছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে নামাজ পড়ার সময় যেমন আওয়াজ হয় সেরকম আওয়াজ। মামুন চোখ বন্ধ করে ফেলল। মনে মনে বলার চেষ্টা করল সে ভুল শুনেছে। গাছের শব্দ হতে পারে। কিছুক্ষন পর আর আওয়াজ পাওয়া গেল না। চোখ খুলে আরেক বিষ্ময়। নিমাই দা দের ঘরে টাঙিয়ে রাখা কৃষ্ঞ এর ছবিটা যেন মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মামুন চোখ বন্ধ করে ব্যাখ্যা দ্বার করাবার চেষ্টা করল। দূরের কোন আলো জানলা দিয়ে ছবির উপর পড়ে এমন হতে পারে। ঠিক তাই। নিজের আহাম্মকিতে নিজেই হাসার পালা। ঘুমানো’র চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। একটা’র পর ভুতের গল্প মনে পড়ছে। মামুন রুমা’র কথা মনে করার চেষ্টা করল।
৪
অনেকক্ষন ধরে রোদে দাঁড়িয়ে আছে। ঘামে একাকার। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লাইন ছেড়ে যাওয়া যাবে না। বিডিআর দের একদল রিলিফ দিচ্ছে লা্ইন এদিক ওদিক হলেই লাঠির বাড়ি। মামুন রিলিফ নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়ায়নি। পুরো ব্যবস্থাটা সরেজমিনে প্রতক্ষ করছে নিছক কৌতুহলে। অসহায় মানুষদের কষ্ট উপলদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টা। ভদ্রলোকের মুখোস পড়ে আতলামী আর কি? মামুনের সঙ্গে কামাল ভাই। একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছেন ক’দিন ধরে। একটা পত্রিকায় কাজ করেন। তার সঙ্গেই আসা। পরীক্ষা দিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। এ সময় দেশ জুড়ে ঝড়ের ভয়াল থাবা। ঘূর্ণিঝড়ে বিধস্ত এলাকা পরির্দশনের কৌতুহল আর কামাল ভাই যাচ্ছে তার সঙ্গি হওয়াতে কৈশর থেকেই রোমান্চ অনুভব করা। কিন্তু রোদের দাপটে আর টিকতে পারল না। সরে আসতে হল। ভরপেট খেয়েও দাড়াতে পারল না আর না খাওয়া লোকগুলো কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক হতে হয়।গত কয়েকদিন দেখেছে মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম। বেচেঁ থাকা কত কষ্টকর তবু কি আশায় যেন বেঁচে থাকে মানুষ। স্বপ্ন প্রতারিত তবু স্বপ্ন দেখে বারবার। পথের এক কোণে একটি চায়ের দোকান দিয়ে বসেছে এক বুড়ো চাচা। কাষ্টমার নেই বললেই চলে। জনাকয়েক সাংবাদিক আর রিলিফ দিতে আসা মামুনে’র বয়সী কিছু ছেলে মেয়ে আছে। চা খাব। পিরিচে না ঢেলে চা খেতে পারে না সে। একটা মেয়ে খুব কৌতুহল নিয়ে মামুনের ফু দিয়ে চা খাওয়া দেখছে। মামুন তাকে কিছুটা অবাক করে দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করল
: ভালো আছেন?
অবাক হয়ে মামুনের দিকে তাকিয়ে সীমাহিন চেষ্টা স্মরন করার। মামুনই আবার কথা বলে উঠল -
: আপনি ঢাকা থেকে আসছেন।
: জি। কিন্তু আপনাকে তো…
: চিনতে পারলেন না। তাই তো। আমিও পারিনি।
চা এর বিল মিটিয়ে সোজা হাটা ধরে মামুন। পিছনের দিকে একবারও ফিরে না তাকিয়ে। জানে অবাক বিস্ময়ের এক জোড়া চোখ নিরীক্ষন করছে। সেই প্রথম রুমা’র সাথে দেখা।
৫
মেঘের দিকে তাকিয়ে ছবি কল্পনা করা মামুনের ছোট বেলার অভ্যাস। পাবলিক লাইব্রেরীর চত্তরে বসে সেই চেষ্টায় করছিল। এমন সময় প্রশ্ন -
: কেমন আছেন।
অবাক হবার পালা। সেই মেয়েটি। যেন মামুনকে জব্দ করার জন্যই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।
: আপনি ঢাকাতেই থাকেন।
আগের সেই কথোপকথনের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা বোধহয়।
: আপনি
: কি চিনতে পারেন নি। আমি কিন্তু ঠিকই চিনেছি।
: আমিও চিনেছি। কিন্তু একটু অবাক হয়েছি আপনাকে দেখে।
: আপনি তো অবাক করে দিতে ভালবাসেন। তা নিজে অবাক হয়ে কেমন লাগছে।
মামুন হাসল। সে হাসিই যেন মামুন আর রুমা’র সম্পর্কটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে চলল। পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে ভাব ভালবাসায় গড়াল ব্যাপারটা। মনের রঙিন ঘুরি উড়িয়ে দিল এই যান্ত্রিক নগড়ে। সব কোলাহোল ছাড়িয়ে নির্জন নিরিবিলিতে প্রেম করতে করতে একদিন রুমা’র সাথে বিয়ে হয়ে গেল।আসলে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে এমন কিছুই ছিল না দুজনের ভিতর।সে পারিবারিক হোক আর সামাজীক। তাই খুব সহজেই ওরা একে অপরের কাছে আসতে পেরেছিল। বাসর রাতে হৈমন্তীতে পড়া সেই কথাটা নাড়া দিয়ে গেল – “পাইলাম”।
৬
রুমা আর মামুনের সম্পর্কটা বন্ধুর মত। একে বারে তুই সর্ম্পক। ভালোবাসার কমতি পরিলক্ষিত হয়নি কখনো কোথাও। ঢাকা শহরে একটা ছোট্ট ফ্লাটে থা্কে। একটা কাজের মেয়ে দেশের বাড়ী থেকেই এসেছে। ভালই চলছিল। খুনসুটি ঝগড়া ঝাটি যে একেবারে হত না তা না। তবে সাময়িক। সকাল ৭টার মধ্যে মামুনকে বেড়িয়ে পড়তে হয়। সারাদিন গার্মেন্টেস এ থাকে। ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা। অফিসের আশেপাশে বাসা নিয়ে লাভ নেই। কারন অফিসে তার কোন কাজ নেই। যখন যে গার্মেন্টস এ কাজ চলে সেখানেই ডিউটি। রুমা’র একাক্বিত্ব ঘোচানের চেষ্টার কমতি নেই মামুনে’র। টি.ভি তো আছেই সাথে একটা নেট এর লাইন সহ একটা পি.সি কিনে দিয়েছে। শিখিয়ে দিয়েছে হাতে ধরে ব্যবহার। কিন্তু এই নেট লাইন ই একদিন দুই জনের নিবিড় সর্ম্পকে হঠ্যাৎ কেন যে ফাটল ধরাল তা বুঝে উঠতে পারল না। আসলে দোষটা কার কোথায় কতটুকু সে প্রশ্নে কোনদিনই একমত হতে পারেনি। প্রথম প্রথম নেট এ রুমা কি করে না করে খুব আগ্রহ ভরে মামুনকে দেখাতো। কিন্তু তারপর কোথায় যেন একটা গোপনীয়তা। লুকোচুরি খেলা। কিছু বিশেষ লোকের সাথে আলাপ চারিতায় বারবার মানা করা সত্বেও মামুন আবিষ্কার করে কি নেশায় আড্ডায় বুদ হয়ে থাকে সে। ভয়ঙ্কার কিছু হলেও হতে পারে ছা’পোষা মানুষ মামুন প্রশয় দিতে পারে না।নিজের মনটা’র ভিতর অশুভ চিন্তা বয়ে যায়। নারীর অধিকারের প্রশ্নে বড় বড় বুলি আউরানো এই মামুনই নিজেকে আবিষ্কার করে পৃথিবীর রঙ্গমন্চে অভিনেতা হিসাবে। এক কথা দু কথায় তর্ক। থামতে চাই না। বহু ব্যবহার করা তর্কের মূহৃতে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে ঠোটের আলতো স্পর্শ মেখে দিয়া ঠোটে ওষুধটাও ইদানিং আর কাজ করে না। ঝগড়া চলতেই থাকে ভোর রাত অবধি -
: এটা কি হলো?
: ভালোবাসা।
: এ সব ন্যাকামী আমার সাথে আর করবা না।
: আচ্ছা করব না একটু হাস।
: ধ্যাৎ, ছাড় না, ছাই?
: ছাড়ব না।কি করবি?
: উফ। অসহ্য।
রুমা রেগে উঠে চলে যায়। অনেকক্ষন কোন খোজঁ নেই। মামুন পিছু পিছু যেয়ে দেখি সেই নেট। মেজাজ তিরিক্ষি হয়। সব ভালবাসাকে অপমান করে গায়ে হাত তুলে ফেলে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুমা। দুচোখ বেয়ে নেমে আসতে থাকে জল। লজ্জায় সে জল মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে সামনে থেকে দ্রুত উঠে গিয়ে বেডরুমে ভিতর থেকে দরজায় সিটকিনি দেই। কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থাকে মামুন।
৭
পরদিন অফিস থেকে ফিরে রুমা’কে আর বাসায় দেখতে পাই না। ফুলির হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেছে -
: “চললাম। সন্দেহ করে ভালবাসাকে অপমান করেছ। আমার একাকিত্বকে ঘোচাতে না পেরে সহজাত পুরুষালী স্বভাব দেখিয়েছ। তোমার কাছ থেকে আমার আশা অনেক বেশী ছিল। আর দশ জনের সাথে তোমার পার্থক্য ঘুচিয়ে দিলে।ভাল থেকো।”
তারপর প্রায়ই একমাস হত চলল। রুমা বাপের বাড়ী থেকে আসে নি। মামুন একাই ঈদ করতে চলে এসেছে গ্রামের বাড়ী। এই মধ্যরাতে ভয় তাড়াবার জন্য এসব যখন ভাবছে মামুন ঠিক তখনই ভূমিকম্প হল। প্রথম দফা’য় তাই মনে হয়েছে। কিন্তু চোখ খোলার আগেই মনে হল পুরো খাট ধরে কেউ যেন ঝাকি দিচ্ছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভীষন ভয় লাগছে। কোন ব্যাখা দাড় করাতে পারছে না। কলেমা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল প্রান পনে। এতে ভয় দূর হয়। কিছুতেই মনে পড়ছে না। এ সময় গগন বিদারি একটা চিৎকার ভেসে এল। কোন পিচাশের পক্ষেই এরকম আওয়াজ করা সম্ভব। মামুন লাফ মেরে উঠল। নিমাই দা নিমাই দা বলে প্রান পনে চিল্লাতে লাগল। কোন সাড়া শব্দ নেই। দরজা খুলে বাইরে যাবার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলতেই যে দৃশ্য দেখল তাতে আত্বারাম খাচাঁ হবার যোগাড়। বৌদি দাড়িয়ে আছে। সিনেমায় দেখা রক্তচোষা ড্রাকুলাদের মত লাগছে। দাতে রক্ত লেগে আছে। সারা শরিরে রক্ত। কুৎসিত শব্দ করছে। কাচাঁ মাঙসের গন্ধ এসে নাকে লাগল। সামনে নিমাই দা’র লাশ পড়ে আছে। সেখান থেকে কলিজা বের করে খাচ্ছিল বোধহয়। ওফ এত বিভৎস! থুথু না বমি যেন করল বৌদি। গলা মাংস আর কলিজা বের হয়ে আসছে মুখ দিয়ে। মামুন স্থির। মামুনের দিকে এগিয়ে আসছে নর খাদকটা। নখ গুলো বেশ বড় বড়। মামুন ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল। কিন্তু একেবারে নিখুত কাজ। সোজা মামুনের গলায় দাতঁ বসে গেছে। অজগরের খড়গোশ ধরার মত মামুনকে জাপটে ধরে রক্ত চুষতে লাগল। মামুনের দেহ নিথর। শেষবারের মত রুমা’র মুখটা মনে পড়ছে।
পাদটীকা.
মামুনের লাশ পাওয়া গেল পরদিন সকালে ঝিলের ধারে। নিমাই সরকার প্রথম দেখে। পরে সবাইকে খবর দেয়। পুলিশি তদন্ত চলছে। কি হয়েছিল ঠিক কেউ বলতে পারে না। তবে মামুনের গলায় দুটো ফুটো ছিল এটা নিশ্চিত।
: কিরে, মামুন না। কি হয়েছে তোর।
: নিমাই দা। খুব খারাপ লাগছে
: দাড়া। আমাকে ধরে দাড়া।
: মনে হয় পারব না। একটু পানি খাওয়াতে পারবে।
: পানি নেই। ধর স্প্রাইট খা।
: দেও।
মামুন স্প্রাইট দিয়েই কুলকুচি করল। আরেকবার বমি হয়ে গেল।
: নিমাই দা, আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবা।
: শোন আমার বাসাতো কাছেই। তুই চল। আগে কিছুক্ষন রেস্ট নিবি।
২
মামুন বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিল। নিমাই দা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের অংকের মাষ্টার। মামুনদের দু-ব্যাচ সিনিয়ার। অসম্ভব ভাল। কিছু মানুষ থাকে উপকার করার জন্য জন্মায় সেই টাইপের। মামুন নিমাই এর হাত ধরে উঠে দাড়াল। দু-জনেই নিরবে এগিয়ে চলছে। গুনগুন করে নিমাই দা কি যেন একটা গাইছে। মামুনের তখন শোনার মত অবস্থা নেই। হঠ্যাৎ নিমাই দা মামুনের হাত শক্ত করে ধরল।
: কি হয়েছে?
: সামনে দেখ।
সামনে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাফনের কাপড় পড়ে পাচঁটা লাশ পড়ে আছে ধান ক্ষেতের উপর। হালকা নড়ছেও। ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল কেন জানি।
: চল
: কি ওগুলো
: চল না। যেয়ে দেখি।
: যাবা
: দুর গাধা। তুইতো ভয়েই আধমরা হয়ে গেলি।
: আমিতো এমনিতেই আধঁমরা। কিছু দেখলে কিন্তু ফুল মরা হয়ে যাব।
: বকবক করিস না। চল
কিছু দুর যেয়েই ঘটনা পরিস্কার হল। ধান ক্ষেতের উপর কে যেন কাপড় শোকাতে দিয়েছে। সাদা কাপড়। সেগুলোই দূর থেকে লাশের মত লাগছে। দু-দজনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। নিমাই দা’র গানটা এবার বোঝা যাচ্ছে। নজরুল সংগীত।
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….
ভুলিও স্মৃতি মম নিশীথ স্বপন সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ পরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….
৩
মামুন শুয়ে আছে নিমাই দা’র বাড়িতে। বাসা পর্যন্ত যেতে পারে নি। নিমাই দা’র বাড়ির সামনে আরেকবার বমি। কিছুতেই নিমাই দা ছাড়ল না। একটা এভোমিন পাওয়া গেছে। বৌদিও খুব ভাল। সাক্ষাত প্রতিমা’র মত চেহারা। মামুনের বিছানা গুছিয়ে দিল। বেশি কথা না বাড়িয়ে মামুন চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ছোট্ট একটা বাড়ী নিমাই দা দের। তিন রুমের। উপরে টিন। নিমাই দা বৌদি’ পাশের রুমে। বাসায় বোধহয় আর কেউ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিমাই দা’র একটা ছোট বোন ছিল। রাজশ্রী। মামুনের সাথে একটা অনৈতিক সম্পর্কও কিভাবে যেন গড়ে উঠেছিল যৌবনের প্রথম বছরে। বেশি দূর আর এগোয়নি। মামুন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে চলে এল। পরের বার গিয়ে শোনে বিয়ে হয়ে গেছে। সে অনেক দিন হল। শুনেছি এখন তিন ছেলে মেয়ের মা।মামুন রাজশ্রীর চেহারাটা মনে করা চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না। আর দু-চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই। হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। অদ্ভুত একটা শব্দে। মনে হচ্ছে এ ঘরে কোন মহিলা নামাজ পড়ছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে নামাজ পড়ার সময় যেমন আওয়াজ হয় সেরকম আওয়াজ। মামুন চোখ বন্ধ করে ফেলল। মনে মনে বলার চেষ্টা করল সে ভুল শুনেছে। গাছের শব্দ হতে পারে। কিছুক্ষন পর আর আওয়াজ পাওয়া গেল না। চোখ খুলে আরেক বিষ্ময়। নিমাই দা দের ঘরে টাঙিয়ে রাখা কৃষ্ঞ এর ছবিটা যেন মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মামুন চোখ বন্ধ করে ব্যাখ্যা দ্বার করাবার চেষ্টা করল। দূরের কোন আলো জানলা দিয়ে ছবির উপর পড়ে এমন হতে পারে। ঠিক তাই। নিজের আহাম্মকিতে নিজেই হাসার পালা। ঘুমানো’র চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। একটা’র পর ভুতের গল্প মনে পড়ছে। মামুন রুমা’র কথা মনে করার চেষ্টা করল।
৪
অনেকক্ষন ধরে রোদে দাঁড়িয়ে আছে। ঘামে একাকার। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লাইন ছেড়ে যাওয়া যাবে না। বিডিআর দের একদল রিলিফ দিচ্ছে লা্ইন এদিক ওদিক হলেই লাঠির বাড়ি। মামুন রিলিফ নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়ায়নি। পুরো ব্যবস্থাটা সরেজমিনে প্রতক্ষ করছে নিছক কৌতুহলে। অসহায় মানুষদের কষ্ট উপলদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টা। ভদ্রলোকের মুখোস পড়ে আতলামী আর কি? মামুনের সঙ্গে কামাল ভাই। একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছেন ক’দিন ধরে। একটা পত্রিকায় কাজ করেন। তার সঙ্গেই আসা। পরীক্ষা দিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। এ সময় দেশ জুড়ে ঝড়ের ভয়াল থাবা। ঘূর্ণিঝড়ে বিধস্ত এলাকা পরির্দশনের কৌতুহল আর কামাল ভাই যাচ্ছে তার সঙ্গি হওয়াতে কৈশর থেকেই রোমান্চ অনুভব করা। কিন্তু রোদের দাপটে আর টিকতে পারল না। সরে আসতে হল। ভরপেট খেয়েও দাড়াতে পারল না আর না খাওয়া লোকগুলো কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক হতে হয়।গত কয়েকদিন দেখেছে মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম। বেচেঁ থাকা কত কষ্টকর তবু কি আশায় যেন বেঁচে থাকে মানুষ। স্বপ্ন প্রতারিত তবু স্বপ্ন দেখে বারবার। পথের এক কোণে একটি চায়ের দোকান দিয়ে বসেছে এক বুড়ো চাচা। কাষ্টমার নেই বললেই চলে। জনাকয়েক সাংবাদিক আর রিলিফ দিতে আসা মামুনে’র বয়সী কিছু ছেলে মেয়ে আছে। চা খাব। পিরিচে না ঢেলে চা খেতে পারে না সে। একটা মেয়ে খুব কৌতুহল নিয়ে মামুনের ফু দিয়ে চা খাওয়া দেখছে। মামুন তাকে কিছুটা অবাক করে দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করল
: ভালো আছেন?
অবাক হয়ে মামুনের দিকে তাকিয়ে সীমাহিন চেষ্টা স্মরন করার। মামুনই আবার কথা বলে উঠল -
: আপনি ঢাকা থেকে আসছেন।
: জি। কিন্তু আপনাকে তো…
: চিনতে পারলেন না। তাই তো। আমিও পারিনি।
চা এর বিল মিটিয়ে সোজা হাটা ধরে মামুন। পিছনের দিকে একবারও ফিরে না তাকিয়ে। জানে অবাক বিস্ময়ের এক জোড়া চোখ নিরীক্ষন করছে। সেই প্রথম রুমা’র সাথে দেখা।
৫
মেঘের দিকে তাকিয়ে ছবি কল্পনা করা মামুনের ছোট বেলার অভ্যাস। পাবলিক লাইব্রেরীর চত্তরে বসে সেই চেষ্টায় করছিল। এমন সময় প্রশ্ন -
: কেমন আছেন।
অবাক হবার পালা। সেই মেয়েটি। যেন মামুনকে জব্দ করার জন্যই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।
: আপনি ঢাকাতেই থাকেন।
আগের সেই কথোপকথনের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা বোধহয়।
: আপনি
: কি চিনতে পারেন নি। আমি কিন্তু ঠিকই চিনেছি।
: আমিও চিনেছি। কিন্তু একটু অবাক হয়েছি আপনাকে দেখে।
: আপনি তো অবাক করে দিতে ভালবাসেন। তা নিজে অবাক হয়ে কেমন লাগছে।
মামুন হাসল। সে হাসিই যেন মামুন আর রুমা’র সম্পর্কটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে চলল। পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে ভাব ভালবাসায় গড়াল ব্যাপারটা। মনের রঙিন ঘুরি উড়িয়ে দিল এই যান্ত্রিক নগড়ে। সব কোলাহোল ছাড়িয়ে নির্জন নিরিবিলিতে প্রেম করতে করতে একদিন রুমা’র সাথে বিয়ে হয়ে গেল।আসলে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে এমন কিছুই ছিল না দুজনের ভিতর।সে পারিবারিক হোক আর সামাজীক। তাই খুব সহজেই ওরা একে অপরের কাছে আসতে পেরেছিল। বাসর রাতে হৈমন্তীতে পড়া সেই কথাটা নাড়া দিয়ে গেল – “পাইলাম”।
৬
রুমা আর মামুনের সম্পর্কটা বন্ধুর মত। একে বারে তুই সর্ম্পক। ভালোবাসার কমতি পরিলক্ষিত হয়নি কখনো কোথাও। ঢাকা শহরে একটা ছোট্ট ফ্লাটে থা্কে। একটা কাজের মেয়ে দেশের বাড়ী থেকেই এসেছে। ভালই চলছিল। খুনসুটি ঝগড়া ঝাটি যে একেবারে হত না তা না। তবে সাময়িক। সকাল ৭টার মধ্যে মামুনকে বেড়িয়ে পড়তে হয়। সারাদিন গার্মেন্টেস এ থাকে। ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা। অফিসের আশেপাশে বাসা নিয়ে লাভ নেই। কারন অফিসে তার কোন কাজ নেই। যখন যে গার্মেন্টস এ কাজ চলে সেখানেই ডিউটি। রুমা’র একাক্বিত্ব ঘোচানের চেষ্টার কমতি নেই মামুনে’র। টি.ভি তো আছেই সাথে একটা নেট এর লাইন সহ একটা পি.সি কিনে দিয়েছে। শিখিয়ে দিয়েছে হাতে ধরে ব্যবহার। কিন্তু এই নেট লাইন ই একদিন দুই জনের নিবিড় সর্ম্পকে হঠ্যাৎ কেন যে ফাটল ধরাল তা বুঝে উঠতে পারল না। আসলে দোষটা কার কোথায় কতটুকু সে প্রশ্নে কোনদিনই একমত হতে পারেনি। প্রথম প্রথম নেট এ রুমা কি করে না করে খুব আগ্রহ ভরে মামুনকে দেখাতো। কিন্তু তারপর কোথায় যেন একটা গোপনীয়তা। লুকোচুরি খেলা। কিছু বিশেষ লোকের সাথে আলাপ চারিতায় বারবার মানা করা সত্বেও মামুন আবিষ্কার করে কি নেশায় আড্ডায় বুদ হয়ে থাকে সে। ভয়ঙ্কার কিছু হলেও হতে পারে ছা’পোষা মানুষ মামুন প্রশয় দিতে পারে না।নিজের মনটা’র ভিতর অশুভ চিন্তা বয়ে যায়। নারীর অধিকারের প্রশ্নে বড় বড় বুলি আউরানো এই মামুনই নিজেকে আবিষ্কার করে পৃথিবীর রঙ্গমন্চে অভিনেতা হিসাবে। এক কথা দু কথায় তর্ক। থামতে চাই না। বহু ব্যবহার করা তর্কের মূহৃতে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে ঠোটের আলতো স্পর্শ মেখে দিয়া ঠোটে ওষুধটাও ইদানিং আর কাজ করে না। ঝগড়া চলতেই থাকে ভোর রাত অবধি -
: এটা কি হলো?
: ভালোবাসা।
: এ সব ন্যাকামী আমার সাথে আর করবা না।
: আচ্ছা করব না একটু হাস।
: ধ্যাৎ, ছাড় না, ছাই?
: ছাড়ব না।কি করবি?
: উফ। অসহ্য।
রুমা রেগে উঠে চলে যায়। অনেকক্ষন কোন খোজঁ নেই। মামুন পিছু পিছু যেয়ে দেখি সেই নেট। মেজাজ তিরিক্ষি হয়। সব ভালবাসাকে অপমান করে গায়ে হাত তুলে ফেলে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুমা। দুচোখ বেয়ে নেমে আসতে থাকে জল। লজ্জায় সে জল মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে সামনে থেকে দ্রুত উঠে গিয়ে বেডরুমে ভিতর থেকে দরজায় সিটকিনি দেই। কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থাকে মামুন।
৭
পরদিন অফিস থেকে ফিরে রুমা’কে আর বাসায় দেখতে পাই না। ফুলির হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেছে -
: “চললাম। সন্দেহ করে ভালবাসাকে অপমান করেছ। আমার একাকিত্বকে ঘোচাতে না পেরে সহজাত পুরুষালী স্বভাব দেখিয়েছ। তোমার কাছ থেকে আমার আশা অনেক বেশী ছিল। আর দশ জনের সাথে তোমার পার্থক্য ঘুচিয়ে দিলে।ভাল থেকো।”
তারপর প্রায়ই একমাস হত চলল। রুমা বাপের বাড়ী থেকে আসে নি। মামুন একাই ঈদ করতে চলে এসেছে গ্রামের বাড়ী। এই মধ্যরাতে ভয় তাড়াবার জন্য এসব যখন ভাবছে মামুন ঠিক তখনই ভূমিকম্প হল। প্রথম দফা’য় তাই মনে হয়েছে। কিন্তু চোখ খোলার আগেই মনে হল পুরো খাট ধরে কেউ যেন ঝাকি দিচ্ছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভীষন ভয় লাগছে। কোন ব্যাখা দাড় করাতে পারছে না। কলেমা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল প্রান পনে। এতে ভয় দূর হয়। কিছুতেই মনে পড়ছে না। এ সময় গগন বিদারি একটা চিৎকার ভেসে এল। কোন পিচাশের পক্ষেই এরকম আওয়াজ করা সম্ভব। মামুন লাফ মেরে উঠল। নিমাই দা নিমাই দা বলে প্রান পনে চিল্লাতে লাগল। কোন সাড়া শব্দ নেই। দরজা খুলে বাইরে যাবার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলতেই যে দৃশ্য দেখল তাতে আত্বারাম খাচাঁ হবার যোগাড়। বৌদি দাড়িয়ে আছে। সিনেমায় দেখা রক্তচোষা ড্রাকুলাদের মত লাগছে। দাতে রক্ত লেগে আছে। সারা শরিরে রক্ত। কুৎসিত শব্দ করছে। কাচাঁ মাঙসের গন্ধ এসে নাকে লাগল। সামনে নিমাই দা’র লাশ পড়ে আছে। সেখান থেকে কলিজা বের করে খাচ্ছিল বোধহয়। ওফ এত বিভৎস! থুথু না বমি যেন করল বৌদি। গলা মাংস আর কলিজা বের হয়ে আসছে মুখ দিয়ে। মামুন স্থির। মামুনের দিকে এগিয়ে আসছে নর খাদকটা। নখ গুলো বেশ বড় বড়। মামুন ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল। কিন্তু একেবারে নিখুত কাজ। সোজা মামুনের গলায় দাতঁ বসে গেছে। অজগরের খড়গোশ ধরার মত মামুনকে জাপটে ধরে রক্ত চুষতে লাগল। মামুনের দেহ নিথর। শেষবারের মত রুমা’র মুখটা মনে পড়ছে।
পাদটীকা.
মামুনের লাশ পাওয়া গেল পরদিন সকালে ঝিলের ধারে। নিমাই সরকার প্রথম দেখে। পরে সবাইকে খবর দেয়। পুলিশি তদন্ত চলছে। কি হয়েছিল ঠিক কেউ বলতে পারে না। তবে মামুনের গলায় দুটো ফুটো ছিল এটা নিশ্চিত।
ভৌতিক গল্প: চরিত্র


আমি একজন লেখক- কিন্তু আমার খুব একটা বই বের হয়নি। হাতে গোনা মাত্র দশটা। সব গুলো রহস্য উপন্যাস। আমি আগে লিখতে পারতাম না। কিন্তু এক সময় খুব ভাল গল্প বানাতাম। এখন সেই গল্প গুলোকে উপন্যাসের রুপ দেই। এটার জন্য আমাকে পড়ে থাকতে হয় একা একা। আমার লেখার রুমে আমি লেখার সময় এই জন্যই কারো প্রবেশ নিষেধ। করলে ও আমাকে ডাকা নিষেধ। কারন আমার মনযোগ ব্যাহত হয়। আমি রেগে যাই। উল্টা পালটা কান্ড ঘটাই। সবার মনে হয় আমি পাগলামি করছি। কিন্তু আমি তো জানি আমি কেন করি। আমি পাগলামি করি- কারন আমি লিখতে ভালবাসি। আমি পাগলামি করি- কারন লেখাই আমার জীবন। আমি সারা মাস ঘরেই বসে কাটাই। কিন্তু মাসে দিন পাঁচেক আমি থাকি একদম একা। এই সময় আমার লেখাই হয় আমার জীবন।
কিন্তু সেইবার আমি পারিনি। কারন আমার বাসায় চলে এসেছে আমার ছোট বোন- বোনের জামাই এবং তাদের দুই বিচ্ছু। নীলা মনির জন্ম হয়নি তখনো- এই বিচ্ছু দুইটাই ছিল আমার জান। আমার খেলার সাথি। আমি বড়- কিন্তু মামার কাছে ভাগিনা ভাগিনী এক অন্য রকম আনন্দের উৎস। আমি ওদের সাথে এক সময় খেলতাম। নীলার জন্মের পর তাই ওরা আমার সাথে তেমন খেলতা পারেনা। আমি ও ওদের কে তেমন সময় দিতে পারিনা। এক জন এবার ক্লাস টেনে। কিন্তু এখন ও মামা বললেই পাগল হয়ে যায়। আমি ওদের কাছে এখন ও সেই ছোট মামাই রয়ে গেছি।
সেইবার আমাকে বাংলাবাজারের একাতন প্রকাশনীর সকাল মাহিন ভাই বললেন একটা সিরিয়াল গল্প লিখতে। এটা একটা উপন্যাস সিরিজ হিসেবে বের করতে চান উনি। আমার ও সেই সময় টাকার দরকার ছিল। বাজারে আমার বই কিন্তু দেদারসে চলে। কিন্তু নীলা মনি আবদার করেছে আমাকে একটা গাড়ি কিনতে হবে। প্রতিদিন রিক্সায় যেতে যেতে ওর হাটু ব্যাথা হয়ে গেছে। আমার এত টাকা ছিলনা গাড়ি কেনার মত। কিন্তু মেয়ের আবদার। তাই টানা দুই সপ্তাহের জন্য আমি বিদায় নিলাম নিজের বাসা থেকে। বিদায় নিলাম বললে ভুল হবে- কাউকেই কিছু না জানিয়ে একটা চিঠি লিখে বিদায় নিলাম । চিঠিতে ঠিকানা দেয়া ছিলনা। শুধু লেখা ছিল আমি যেখানেই আছি- ভাল আছি- এটুকুই। সাথে কিছু টাকা পয়সা ও ছিল। সোমা কে দিয়ে গিয়েছিলাম । এই সময় টুকু যেন বাচ্চা কাচ্চা গুলোকে সে সামলায়। আর এটা বলেই আমি উদাও।
কিন্তু উদাও হতে গেলেই কি উদাও হওয়া যায়?? আমি যেন পড়লাম অথই সাগরে। একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। কিন্তু সেটার পাশে চলছিল কন্সট্রাকশনের কাজ। আমাকে প্রথম দিনেই ভাগতে হয়েছে। আমি শব্দের মাঝে লিখতে পারিনা। লিখতে পারিনা কোন গোলমালের মাঝে। লেখার সময় নিঃশব্দ চাই- লেখার সময় চাই এক অন্য রকম পরিবেশ। তাই আমি প্রথম দিনের মাঝেই ভেগেছি। গিয়ে উঠলাম আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। ছেলে মেয়ের চেচামেচি নেই সেখানে। বন্ধু থাকে একা। কিন্তু সেখানে ও আমার মন টিকল না। শেষে আমাকে বন্ধু রেগে গিয়ে বলল চলে যেতে কোন এক জংলে।কথাটা আমার খুব মনে ধরল। আমি খুঁজতে লাগলাম একটা জংগুলে পরিবেশ। তাতে ও আবার সমস্যা। আমি খুঁজে পেলাম না। আতঙ্কিত হলাম জেনে যে বাংলা দেশে আস্তে আস্তে বনজঙ্গল কমে যাচ্ছে। মানুষ গাছ কেটে ফেলছে। কিন্তু বান্দরবানের দিকে কিছু পাহাড়ি জংগুলে পরিবেশ আছে এখন ও। সেখানেই নাকি একটা কাঠের রেষ্ট হাউজ আছে- কিন্তু পরিত্যাক্ত। আগে মানুষ থাকত- এখন কেউ থাকেনা। আমি শুনেই চলে গেলাম সেখানে। আমার উদ্দেশ্য ছিল দিন সাতেক থাকতে পারলেই হবে। কিছু খাবার দাবার আর কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেলাম সেখানে। ঘটনার শুরু সেখানেই।
আমি সেই কাঠের রেষ্ট হাউজ টা দেখে অনেক পছন্দ করে ফেললাম। জায়গাটার চারপাশে নীলচে পাহাড় আর নিলচে পাতার বন। দূরে কিছু কিছু যায়গায় ঝরনা। মাঝে মাঝে ভেসে ভেসে আসে কলকল পানির শব্দ। কেমন যেন এক মায়াময় স্বর্গীয় পরিবেশ। আমাকে নিয়ে গেল যেন এক স্বপ্নের জগতে। আমি ঘরটার সব থেকে ছোট রুম টা বেছে নিয়ে পরিষ্কার করে ফেললাম। সেখানে একটা খাট ছিল – কাঠের চৌকি বলাই ভাল। আমি সেটাতে শুয়ে শুয়ে লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। মাঝে মাঝে আমি শুয়ে শুয়ে লিখি। শুয়ে শুয়ে লেখার মাঝে একটা আনন্দ আছে। অবশ্য বসে বসে লেখা উপন্যাস গুলোই আমার সবচাইতে সাড়া ফেলেছে বেশী। তার ভেতর একটা উপন্যাস থেকে নাটক ও হয়েছে। প্রায় সময় তাই এখন নাটক লেখার ফরমাইশ আসে। কিন্তু আমি পারিনা। আমি শুধু রহস্য গল্প লিখি।
সেই রুমে সন্ধ্যার মধ্যেই লেখার পরিবেশ তৈরি করে ফেললাম। কারেন্ট নেই সেখানে। তাই অনেক গুলো মোমবাতি জোগার করলাম। সাথে লাইটার- ম্যাচ- আরো অনেক কিছু। রান্না বান্না করে ফেললাম একটা স্টোভ নিয়ে এসেছিলাম- তাতে। তারপর লেখা শুরু করলাম।
আমার নতুন গল্পটার প্লট ছিল একটা মানুষ কে নিয়ে- যে ছিল একজন লেখক।ঠিক আমার মতই। আসলে লেখক তার লেখার মাঝে নিজের চরিত্রকে সব চাইতে বেশী ফুটিয়ে তুলতে পারে। তাই আমার নিজের চরিত্রকে নিয়েই লিখব ভেবেছিলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। আমার গল্পের লেখক চরিত্র তার গল্প লেখার জন্য এসেছে বান্দর বানে। সেখানে সে লিখতে বসেছে। এগিয়ে যেতে শুরু করে আমার গল্প। গল্পে কৌশলে এই রেষ্ট হাউজ টাকে ও ঢুকিয়ে দিলাম। লেখকের কি যে ক্ষমতা সেটা লেখক ই জানে।
উপন্যাসের মোড় ঘুরছে। লেখক লিখে চলেছে একটা উপন্যাস। উপন্যাসে কিভাবে ভুতুরে ব্যাপার ঢুকানো যায় সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে লিখে চলেছি। হটাত মনে হল- যদি এই লেখকের একটা ডুব্লিকেট হটাত করে ভুতুরে ভাবে তৈরি করা যায়- তাহলে মন্দ হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। সাথে সাথে লেখার ভেতর লেখকের পাশে উপস্থিত করালাম লেখকের মত দেখতে আরেকজন মানুষ কে। ঠিক মানুষ না- মানুষের মত কেউ একজন। লেখকের মত বেশ ধারন করেছে। উদ্দেশ্য খারাপ না- লেখকের একাকীত্বে বিঘ্ন ঘটানোই এর কাজ। এ এসে লেখকের মনযোগ বিঘ্নিত করবে। এবং লেখকের লেখার বারোটা বাজাবে। ভাবতে ভাবতে লিখে চলেছি। লেখার মাঝে মাঝেই সিগারেট খাবার অভ্যেস আমার। মোমবাতির আলোয় লেখার মাঝে সিগারেটে টান- ফুসফুস ভর্তি নিকোটিন- এবং এগিয়ে চলেছে লিখে যাওয়া।
কিন্তু এমন সময় কেউ একজন যেন আমার পাশ থেকে বলে উঠল-
“এখন কি সিগারেট টা না ধরালেই নয়?”
“এখন কি সিগারেট টা না ধরালেই নয়?”
আমি লিখতে লিখতেই হটাত করে যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ঘরে আমি ছাড়া কেউ নেই। কেউ থাকার কথা ও না। কিন্তু কেউ একজন বিরক্ত হয়ে আমাকে সিগারেট খেতে না করল। আমি খানিকটা বিরক্ত ই হলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে রুমটা দেখে নিলাম- কেউ নেই। থাকার কথা ও নয়। মনের ভুল মনে করে আমি আবার সিগারেটে একটা সুখটান দিলাম। এবং সাথে সাথে আমার পেছন থেকেই কেউ একজন পুরুষ কন্ঠে আবার বলে উঠল-
“আপনাকে না সিগারেট না খেতে বলেছি?”
আমি সেই রকম ভয় পেয়ে গেলাম কথাটা শুনে। আমার পেছনেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমি জানি এই ঘরে কেউ নেই। একটু আগেও কাউকেই দেখিনি। আমি ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরালাম। যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেল। আমার পেছনে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার ই মত একজন। আমার মত পোষাকে। হটাত যেন হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গেল আমার। ভয়ে হাত পা জড়বস্তুর মত হয়ে গেল।
মনে মনে বললাম- আমি যা দেখছি- সব হ্যালুসিনেশন- সব মিথ্যা। কথাটা পাঁচবার বলে আবার তাকালাম- ভেবেছিলাম- দেখবনা নিজের চেহারার সেই মানুষ্টাকে- কিন্ত্ মানূষ্টা দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে আমার পেছনে। আস্তে আস্তে হেটে হেটে এসে আমার বিছানায় বসল। আমার ঠিক পাশেই। আমি লিখতে লিখতে শোয়া থেকে কখন যে উঠে বসেছি- খেয়াল ছিলনা। আমি সেই বসা থেকেই যেন পড়ে যাব খাটের উপর- এমন মনে হল। ঘাড় ব্যাথা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। আমি সব আনলে ও প্রেশারের ঔষধ আনতে ভুলে গেছি। আমি তো জানতাম না আমার লেখার ভেতর থেকে একটা চরিত্র সামনে এসে দাঁড়াবে। জানলে আমি এখানেই আসতাম না।
আমি সেই রকম ভয় পেয়ে গেলাম কথাটা শুনে। আমার পেছনেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমি জানি এই ঘরে কেউ নেই। একটু আগেও কাউকেই দেখিনি। আমি ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরালাম। যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেল। আমার পেছনে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার ই মত একজন। আমার মত পোষাকে। হটাত যেন হার্ট বিট বন্ধ হয়ে গেল আমার। ভয়ে হাত পা জড়বস্তুর মত হয়ে গেল।
মনে মনে বললাম- আমি যা দেখছি- সব হ্যালুসিনেশন- সব মিথ্যা। কথাটা পাঁচবার বলে আবার তাকালাম- ভেবেছিলাম- দেখবনা নিজের চেহারার সেই মানুষ্টাকে- কিন্ত্ মানূষ্টা দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে আমার পেছনে। আস্তে আস্তে হেটে হেটে এসে আমার বিছানায় বসল। আমার ঠিক পাশেই। আমি লিখতে লিখতে শোয়া থেকে কখন যে উঠে বসেছি- খেয়াল ছিলনা। আমি সেই বসা থেকেই যেন পড়ে যাব খাটের উপর- এমন মনে হল। ঘাড় ব্যাথা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। আমি সব আনলে ও প্রেশারের ঔষধ আনতে ভুলে গেছি। আমি তো জানতাম না আমার লেখার ভেতর থেকে একটা চরিত্র সামনে এসে দাঁড়াবে। জানলে আমি এখানেই আসতাম না।
” কি ভয় পেলে??” কেমন যেন ভয়ানক গলায় বলল সে।
আমি আসলেই অনেক ভয় পেয়ে গেছি। জীবনে কোনদিন ভুত দেখিনি। এই প্রথম। তা ও যদি সিনেমা টীভিতে দেখা ভুত গুলোর মত হত। এই ভুত অনেকটা – না না ঠিক আমার মত দেখতে।
আমি আসলেই অনেক ভয় পেয়ে গেছি। জীবনে কোনদিন ভুত দেখিনি। এই প্রথম। তা ও যদি সিনেমা টীভিতে দেখা ভুত গুলোর মত হত। এই ভুত অনেকটা – না না ঠিক আমার মত দেখতে।
” ভয় পাবো না তো কি নাচবো??” রেগে গেলাম আমি।
” না না রাগবেন না। আমাকে দেখে ভয় পাবার কিছু ই নেই। আমি আপনার লেখার ঐ ভুত চরিত্রটা। আপনাকে ভড়কে দেব বলে আপনার মাথা থেকে বের হয়েছি”- বলেই পেত্নি মার্কা একটা খিল খিল হাসি দিল সে।
” না না রাগবেন না। আমাকে দেখে ভয় পাবার কিছু ই নেই। আমি আপনার লেখার ঐ ভুত চরিত্রটা। আপনাকে ভড়কে দেব বলে আপনার মাথা থেকে বের হয়েছি”- বলেই পেত্নি মার্কা একটা খিল খিল হাসি দিল সে।
এদিকে আমার মাথার ভেতর চিন্তার ঝর। এখন কি হবে? একে কি আমার মত ই দেখা যাবে? তার মানে আমি এখন দুই জন? ভাবতে ভাবতেই সে বলে উঠল-
“হ্যাঁ আপনি এখন একা নন- আপনার কোন ভয় ও নেই- আপনি এখন দুই সত্ত্বা। এখন আমি ও আপনি- আপনি ও আমি। হে হে হে ‘ সে কি বাজখাই হাসি। এভাবেই আমি হাসি ভাবতেই রাগ ঊঠে গেল। এই হাসি ৯ বছর ধরে সোমা সহ্য করেছে কি করে? কিন্তু সেই উত্তর দিল-
“হ্যাঁ আপনি এখন একা নন- আপনার কোন ভয় ও নেই- আপনি এখন দুই সত্ত্বা। এখন আমি ও আপনি- আপনি ও আমি। হে হে হে ‘ সে কি বাজখাই হাসি। এভাবেই আমি হাসি ভাবতেই রাগ ঊঠে গেল। এই হাসি ৯ বছর ধরে সোমা সহ্য করেছে কি করে? কিন্তু সেই উত্তর দিল-
” কারন সোমা আপনাকে অনেক ভালবাসে। আপনার মেয়ে ও অনেক অনেক ভালবাসে।” বলে কেমন যেন চোখে তাকাল ও আমার দিকে। হায় হায় কি হবে এখন- ও যে আমার সব কথা চিন্তা করার আগেই বুঝতে পারছে। তার মানে আমি আর সে একজন। কিন্তু দুইটা শরীর। ভাবতে ভাবতে সে আমার দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিল। আমি কি মনে করে ছুঁতে গিয়ে একটা শক খেলাম যেন। ওর শরীর ভয়ানক গরম। যেন জ্বর ১০৬ ডিগ্রি। আমি ওকে বললাম-
” তোমার শরীর এত গরম কেন?”
” কারন তোমার শরীর এখন অনেক ঠান্ডা” বলে হাসি হাসি মুখে তাকাল আমার দিকে। আমি নিজের শরীরে হাত দিলাম। গলায়- ঘাড়ে হাত দিয়েই বুঝলাম আমার শরীর অনেক ঠান্ডা- অনেক। যেন মরে গেছি আমি।
” কারন তোমার শরীর এখন অনেক ঠান্ডা” বলে হাসি হাসি মুখে তাকাল আমার দিকে। আমি নিজের শরীরে হাত দিলাম। গলায়- ঘাড়ে হাত দিয়েই বুঝলাম আমার শরীর অনেক ঠান্ডা- অনেক। যেন মরে গেছি আমি।
ভয় পেয়ে গেলাম আরো। আমি কি মারা গেছি? নাকি আমি মারা যাচ্ছি? আমার নিজের মত একজন আমার শরীরের তাপ শুষে যাচ্ছে- আমি কিছু করতে পারছিনা। কি এক আজব। আমি লেখা ফেলে উঠে দাড়ালাম- হটাত এক বিশ্রী গালি দিয়ে বললাম-
” তুই এখন বের হ- এখনি বের হ। আমি তোকে দেখতে চাইনা। তোর কোন অস্তিত্ব নেই। ”
” তুই এখন বের হ- এখনি বের হ। আমি তোকে দেখতে চাইনা। তোর কোন অস্তিত্ব নেই। ”
কথা শুনে সে হাস্তেই থাকল- হাস্তেই থাকল। আমি ও নিরুপায় হয়ে আলো নিভিয়ে দিলাম। খাতা পত্র মাটিতে ছুড়ে ফেলে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কি ঘুমাব? এই আমার কপি পেষ্ট লোকটা আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি- আমি ই আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছি। কেমন যেন পাগল পাগল ভাব হয়ে গেল আমার।
পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গল অনেক বেলা করে। ঘুম থেকে উঠে আমি কাঊকেই দেখলাম না আমার সামনে। নিশ্চিন্ত হলাম। কিন্তু এই রেষ্ট হাঊজে আর থাকবোনা ডিসিশনন নিয়েই চলে আসলাম ঢাকায়- আমার নিজের বাসায়।
কিন্তু সেখানে আমার জন্য চুড়ান্ত বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। আমি আসার পরেই দেখলাম আমার ঘরে এসে সেই কপি পেষ্ট মানূষ টা বসে আছে। কেউ দেখছেনা। শুধু আমি দেখছি। আমার ই মত একজন আমার রুমে বসে আছে।
সেই দিন থেকে আমার দিনগুলো বিষাক্ত হতে শুরু করেছে। আমি যেখানে যাই- সেই লোকটা আমার পিছে পিছে যায়। কয়েক হাত দূরে থাকে। একবার রিক্সায় করে বাসায় যেতে আমাকে ছিনতাই কারী ধরল। আমি ভেবেছিলাম সব গেছে। কিন্ত্ কেন যেন হটাত ছিনতাই কারী নিজেই ভয় পেয়ে গেল। ভয়েই কিছু না নিয়ে পালাল। আমি ভাবলাম কি সমস্যা? হটাত রিক্সায় দেখলাম আমার পাশেই আমার মত সেই লোক বসে আছে। সেদিন অনেক মজা পেলাম। কিন্তু সমস্যা হল- আমি সোমাকে নিয়ে একটু ও একাকী থাকতে পারিনা। আমার সামনে বসে থাকে সে। প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগত। এখন লাগেনা। এইত- আমার পেছনে এখন ও বসে আছে সে। আমার ই মত দেখতে। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন??
না দেখবেন কিভাবে? আপনি তো আমার লেখা গল্প পড়ছেন। কিন্তু সে আমাকে কথায় কথায় বলেছে- সে নাকি যে কারো মাথায় প্রবেশ করতে পারে। তাই ভাবছি- ওকে আপনার হেপাজতে দিয়ে দেব। কি নিবেন নাকি ? আপনার মত একজন? ঠিক আপনার মত। সব কিছু একই থাকবে। সে হবে আপনার একান্ত সঙ্গী। পরম বন্ধু। যদি চান তবে এই গল্প টা আবার পড়েন। তাহলেই মজা টের পাবেন ………..
(সমাপ্ত)
0 comments:
Post a Comment